News Photo

জুলাই ঘোষণাপত্রে প্রায় ২ কোটি প্রবাসীদের অবদান উপেক্ষার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ

তারিখ: ০৫/০৮/২০২৫ইং

#প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

জুলাই ঘোষণাপত্রে প্রায় ২ কোটি প্রবাসীদের অবদান ও ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন উপেক্ষার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ:

বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতিনিধিত্বকারীঅধিকার ভিত্তিক সংগঠন বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সাথে জানাচ্ছে যে, অন্তবর্তীকালিন সরকার ঘোষিত "জুলাই ঘোষণাপত্র"-এ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রবাসীদেরঅপরিসীম ভূমিকা সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয়েছে। এই উদাসীনতা নতুন প্রজন্মের আন্দোলন এবং প্রবাসীদের ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রতি অবমাননাকর। বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং ঘোষণাপত্র সংশোধনের দাবি জানাচ্ছে।

২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন: এক ঐতিহাসিক অধ্যায়ের অবহেলা। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের এক অভূতপূর্ব গণআন্দোলন ছিল, যা সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠে। এই আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাখো ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করেন। তাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বিশ্বব্যাপি বাংলাদেশী প্রবাসীরাও রাজপথ নেমেছিল। তাদের দাবি ছিল যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরির সুযোগ নিশ্চিত করা। কিন্তু আন্দোলন চলাকালীন পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় শত শত ছাত্র গুরুতর আহত হয় এবং অনেকে জেল জুলুমের শিকার হয়। এই আন্দোলনের চাপে সরকার ২০১৮ সালের অক্টোবরে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়, যা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। মূলত ২০১৮ এর কোটা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটেই ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান হয়।

জুলাই ঘোষণাপত্রে ২০১৮ সালের আন্দোলনের উল্লেখ না থাকা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ইতিহাস বিকৃতি। এটি নতুন প্রজন্মের সংগ্রামকে অস্বীকার করে এবং ভবিষ্যতের আন্দোলনকে দমনের ইঙ্গিত দেয়।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রবাসীদের ভূমিকা:

২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এই গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাংলাদেশীরা ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ান। তাদের সংগ্রামের মূল দিকগুলো ছিল:

-রেমিট্যান্স শাটডাউন: প্রবাসীরা বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ বন্ধ করে দেন, যা দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলে। এই কর্মসূচি স্বৈরাচার সরকারের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়।

-আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ: যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, ইউকে, ইতালিসহ ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ ১০০ টিরও বেশি দেশে প্রবাসীরা মানববন্ধন, সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট ও স্মারকলিপি প্রদান করেন। এতে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়। এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে রাজপথে নামায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব সহ প্রায় ২শতাধিক প্রবাসীরা জেল জুলুমের শিকার হোন।

-সংহতি প্রকাশ: প্রবাসীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের খবর ছড়িয়ে দিয়ে বৈশ্বিক জনমত গড়ে তোলেন। তাদের এই কর্মসূচি দেশের ভেতরে আন্দোলনকারীদের মনোবল বাড়ায়।

জুলাই ঘোষণাপত্রে প্রবাসীদের এই অসাধারণ অবদানের কোনো স্বীকৃতি না থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির রক্তক্ষয়ী যোদ্ধা। তাদের রেমিট্যান্সে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার টিকে থাকে। কিন্তু জুলাই ঘোষণাপত্র তাদের ত্যাগকে অস্বীকার করে প্রমাণ করে যে, দেশের ক্ষমতাধর মহল প্রবাসীদের শুধু "রেমিট্যান্সের মেশিন" হিসেবেই দেখে, তাদের রাজনৈতিক অধিকার ও অবদানের মূল্যায়ন করে না।

প্রায় ২ কোটি প্রবাসীদের পক্ষে বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ নিম্নলিখিত দাবি জানাচ্ছে:

১. জুলাই ঘোষণাপত্রে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই আন্দোলন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

২. জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রবাসীদের ভূমিকার স্বীকৃতি দিতে হবে। ঘোষণাপত্রে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স শাটডাউন, আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ ও সংহতি কর্মসূচির বিবরণ যুক্ত করতে হবে।

৩. জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও ১০% প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। প্রবাসীরা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণের অধিকার রাখেন। এই অধিকার সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত।

জুলাই ঘোষণাপত্র যদি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের প্রতিফলন হতে চায়, তবে এতে সকল স্তরের মানুষের অবদান অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশীরা কখনোই দেশের সংগ্রামকে পিছনে ফেলে বসে থাকেনি। তারা আজও প্রস্তুত আছেন দেশের গণতন্ত্র রক্ষায়। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র সংশোধন করে প্রবাসীদের অধিকার ও ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি।

#আহ্বানে: বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ

 

 

কাজটি শেয়ার করুন

Comment

আপনি কি বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের সদস্য হতে চান?